প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছি আমরা | ভোক্তা-অধিকার

আচ্ছা, আপনার ব্যাগের ভেতর যে নামীদামী ব্র‍্যান্ডের লিপস্টিক ওটা কি আসলেই সেই ব্র‍্যান্ডের?

আন্তর্জাতিক গুণগত মান সম্পন্ন পন্য ক্রয় করতে যেয়ে চকবাজারের মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রোডাক্ট কিনছেন না তো?

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভাল আছেন।আজ আমি পপ অফ কালার লিমিটেড এর পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আমার অভিমত  ব্যক্ত  করতে চাই।  আমি জানি আমার সচেতন পশিয়ানরা এই বিষয়ে আমার অবস্থান জানতে আগ্রহী।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বেশ কিছুদিন থেকেই তাদের অভিযান গুলো সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে ভিডিও আকারে প্রকাশ করছে।আর সেই সুবাদে আমরা স্বনামধন্য অনেক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এমন অনেক কিছু তথ্য  জানতে পারছি যেটি আমাদের কাছে ছিল কল্পনাতীত। শুরুতেই যেটা নিয়ে কথা বলতে চাই  সেটি হল কোন ইম্পোর্টার/ প্রডিউসার এর সিল বা স্টিকার বা হলোগ্রাম ছাড়া পণ্য বিক্রি বিষয়টি কতটুকু নিন্দনীয়/ এটি করা যাবে কি যাবে না বা শাস্তি কি  সেগুলো জানার আগে  চলুন এই  বিষয়টি আমাদের জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ঠিক কতখানি ক্ষতিকারক সেটি আলোচনা করার চেষ্টা করি।

  ➡️প্রথমেই যদি বলি একজন ব্যবসায়ীর যেকোনো আমদানি পণ্য নিয়ম অনুযায়ী লিগ্যাল ইম্পোর্টারের কাছ থেকে পারচেজ বা সংগ্রহ  করার কথা। তাতে করে সরকার এবং ট্যাক্স প্রাপ্য ভ্যাট এবং ট্যাক্স পেয়ে থাকে আর যা জনগণের উন্নয়নের জন্য ব্যবহৃত  হয়। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের উন্নয়নের জন্য ভ্যাট এবং ট্যাক্স  অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পূর্ণ একটি বিষয়।

আচ্ছা এবার আমরা  এই স্টিকার হলোগ্রাম যেটাই বলি না কেন পুরো প্রক্রিয়াটা কেন চালু করা হয়েছে সেটা জানার চেষ্টা করি।কোন পণ্য যখন কোন কোম্পানি বা আমদানিকারক যখন কোন পন্য আমদানি করে,  তখন পণ্যটি নকল হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে এবং আসল পণ্যকে ক্রেতার নিকট তুলে ধরতে প্রত্যেক আমদানিকারক এবং কোম্পানি নিজস্ব স্টিকার সিল বা হলোগ্রাম ব্যবহার করে। এ ধরনের হলোগ্রাম ছাড়া যে কোন প্রোডাক্ট নকল প্রোডাক্ট হিসেবে গন্য হয়।তার মানে কেবল ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে হলোগ্রাম ব্যাতিত সেল  করা হচ্ছে, এবং বিষয়টি দণ্ডনীয় অপরাধ তাই নয় কি? হলোগ্রাম বিহীন পণ্য আনা হলে পণ্যের গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কি চমকে গেলেন যে এটি কিভাবে হতে পারে? না চমকানোর কিছু নেই।আমি ব্যাখ্যা করছি।  একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বা নির্দিষ্ট প্রসেসের মাধ্যমে পরিবহনের নির্দেশনা থাকে। এর ব্যতিক্রম ঘটলে গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে, তাতে করে আল্টিমেটলি ক্ষতির সম্মুখীন কিন্তু ক্রেতারাই হয়ে থাকেন।  আর যদি পণ্য নকল হয়ে থাকে তাহলে কি পরিমান শারীরিক  এবং মানসিক ক্ষতি একজন ক্রেতার হয়ে থাকে সেটা তো  আমরা সকলেই জানি। দেখুন আধুনিক প্রযুক্তিএতটাই এগিয়ে গেছে যে চকবাজারে বসেই যেকোনো সময়  যে কোন দেশের, যে কোন পণ্য  হুবহু তৈরি করা সম্ভব সে সম্পর্কে আমরা কমবেশি  সবাই অবগত।তাই নিজেদেরকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে  সচেতন নিজেকেই হতে হবে।

➡️

যেকোনো পণ্যই আপনি যে জায়গা থেকেই কিনে থাকুন না কেন এমআরপি অর্থাৎ ম্যাক্সিমাম রিটেল প্রাইসেই কিনবেন।   এমআরপি থেকে একটাকাও বেশি দিয়ে  পণ্য ক্রয় করা মানে আপনারই কষ্টে অর্জিত অর্থের লোকসান। অতএব,  যে সকল প্রতিষ্ঠান পণ্যের মূল্য  আমদানিকারক বা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত  এমআরপি থেকে বেশি  নির্ধারণ করে তাদের প্রতি নিন্দা জানিয়ে   খুব সচেতন ভাবে  তাদের প্রতিষ্ঠানকে এড়িয়ে যাওয়াটাই উত্তম বলে আমি মনে করি।আপনার, আমার এই ছোট্ট পদক্ষেপ অনেক বড় ধরনের অন্যায় রুখে দিতে পারবে বলে আমি আশা করছি।

➡️দেশের বাইরে যখন যাই আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো দেখে খুব মন খারাপ হয় এবং হত। কিন্তু তখন দেশে থাকা অল্প কিছু আন্তর্জাতিক ব্রান্ডের এর দিকে মনকে সান্ত্বনা  দেওয়ার চেষ্টা করতাম। যে এই তো সবে শুরু, ধীরে ধীরে সব স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডকেই আমাদের দেশে হাতের নাগালে পাওয়া যাবে। কিন্তু আপনাদের মত আমিও   এই বিশ্বাস  ভালোবাসা ও স্বপ্ন ভেঙে দেওয়ার কষ্টে মর্মাহত।সম্প্রতি ভোক্তা অধিকারের অধিদপ্তর এর অভিযানের দেখলাম কিভাবে স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক ব্রান্ড  ইংলট চোখের মতো  স্পর্শ কাতর অঙ্গে ব্যবহারকৃত মেয়াদ উত্তীর্ণ   প্রসাধনী বিক্রি করছে শুধু তাই নয় তারা এই মেয়াদ উত্তীর্ণ আবার নতুন নতুন মেয়াদের সিল লাগিয়েছে। যা সত্যিকার অর্থে নিন্দনীয়,ঘৃণিত  এবং শাস্তিযোগ্য একটি অপরাধ। 

➡️

আমাদের দেশী ব্র্যান্ড আনজারা, সাজগোজ, প্রিয়,আলমাস এর কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ আমরা আশা করতেই পারি। কারণ তাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা এবং বিশ্বাস টাও  অনেকটা বেশি।  মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সঠিক প্রমাণ উপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে না পারার বিষয়টি সত্যিকার অর্থেই হতাশাব্যঞ্জক। দেখুন, আমি মনে করি যে কোন ব্র্যান্ডের জন্য  সব থেকে বড় অ্যাসেট তার গুডউইল বা রেপুটেশন। এটা এতটাই মূল্যবান যে ভাঙলে আর কখনোই আগের মত জোড়া লাগে না।

প্রত্যেকটি ব্র্যান্ডের প্রতি বা ব্র্যান্ড সংশ্লিষ্ট মানুষদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, দয়া করে আপনারা ক্রেতার স্বার্থকে মূল্যায়ন করুন। ক্রেতার আস্থা অর্জন করে আজ পর্যন্ত কোন ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বলে এই নয় বছরের জার্নিতে দেখিনি। আপনারা যদি জানতে চান কি কি দলিলাদি বা কাগজপত্র  একজন ব্যবসায়ীর সঠিকভাবে আপটুডেট রাখা উচিত এবং কাগজপত্রগুলো আপটুডেট না থাকলে কি ধরনের শাস্তি হতে পারে বা কিভাবে তার প্রতিষ্ঠানকে এফেক্ট করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *